নিজেকে একটা চিকেন মনে হয়

একটা ধর্মীয় কিতাব পড়ছিলাম। বিষয়টা ছিল কম খাওয়া উপকারিতা। কম খাওয়া হলে শরীরে অলসতা আসে না এবং বিভিন্ন রোগ হতে বেচে থাকে যায়, তাছাড়া ভরা পেটে মন প্রফুল্ল থাকে বলে মানুষ ধীরে ধীরে আল্লাহর ইবাদত হতে নিজে দূরে সরিয়ে ফেলে।

– আই টি  ১০ টাকা দে । চিকেন খামূ। ( উল্লেখ্য যে ইউ. এ . ই তে আমরা দেহরামকে টাকা বলেই ডাকি, এটা বাঙ্গলীদের একটা অভ্যাসগত সমস্যা)

– তুমি খাও, আমার কাছে টাকা নাই । মাসের এই শেষে আমার হাত টান যাইতেছে ( উদ্দেশ্য কম খেয়ে কিতাবে উল্লেখ্যতি মহামানবদের পথ অনুসরন করা)

– টাকা নাই মারাইস না, ইউসুফ ভাই , আই টিরে ক, টাকা দেওয়ার জন্য।

-আই টি দিয়া দে, জি এম দরকার হইলে ১৫ টাকা দিবো।

– কি আমি পনের টাকা দিমু মানে, আমি গাড়িও দিমু আবার তেল খরচও দিমু , না এইসব হবে না।

– হে হে হে তাইলে চিকেন খাওয়ার দরকার নাই , আমার দশ টাকা দেওয়ারও দরকার নাই, আল্লাহ বাইচ্ছা গেছি।

– বাইচ্ছা গেছি মারাইস না। টাকা বাহির কর।

– আচ্ছা আই টি , জি এম যখন এত করি কইতেছে দি দে।

– দেখেন ইউসুফ ভাই , জি এম হইলো তালুকদার বংশের লোক, হে যদি চান্দা তুইলা চিকেন আনে , তাইলে কি আর তালুকদারে  ইজ্জত রইল, আমি দশ টাকা দিয়া তালুকদার বংশের মান সম্মান কমাতে চাই না।

– আচ্ছা যা, দশ না পারছ, পাচ টাকা দে, বাকি ২০ টাকা জি এম দিবো, কারন হে হইল  তালুকদার।

– এ এ এ, আমি ১০ টাকা দিমু  , ২০ টাকা দিমু না।

– ২০ টাকা না দিলে খালাস , খাওয়ার দরকার নাই।

– আরে দিবো , আই টি দে , দে ভাই, ৫ টাকা দে। আমিও ৫ টাকা লগে দিতাছি ।

– এই ইউসুফ ভাই, এই সব কি, আপনি কি জন্য ৫ টাকা দিবেন, আপনি দিবেন ১০ টাকা। পাচ টাকা হবে না।

– ইয়া জি এম, আমরা গরীব মানুষ, তাছাড়া হাতের লেখা অত্যান্ত খারাপ, সেই জন্য ৫ টাকা কইরা দিমু।

– আই টি হাসাইস না। ১০ টাকা কইরা ২০ টাকা বাইর কর।

– আমার কাছে পাচ টাকা আছে , এর বেশী নাই।

– আইচ্ছা মা….রি দে ।

-ইয়া আল্লাহ , ইউসুফ ভাই চল, তাড়াতাড়ি আয়, মাগরিব এর লগে লগেই খামু।

– আরে মিয়া আযান হইতাছে , মাগরিব পইড়া যাও।

ইউসুফ ৩০ মিনিট পর চিকনে নিয়া অফিস হাজির।

– ইউসুফ ভাই , জি এম কই?

– গাড়ি পার্কিং কইরা আইতেছে।

– এ্যা দেরী নাই, আই টি, আমি না আসার আগেই খুইল্লা ফেলসোস

– না মানে , তুমি এতো কস্ট করে চিকেন নিয়া আইছো, আবার উপরের আইসা সার্ভ করবা , দেখতে ভাল লাগবো না, তার লাইগা আমিই খুলা শুরু করছি।( আসলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছি)

– আচ্ছা শুরু কর , খানা সামনে রাইখা দেরী করলে খানা অভিশাপ দিবো।

খাওয়া শেষ করে রুমে গেলাম। অফিসের কাজে আমাদের ডিজাইনার ডুবাই গিয়েছিল ম্যানাজারের সাথে, আমি রুমে আসার পাচ মিনিট পরই ডিজাইনারের আগমন সাথে একটা প্যাকেট।

– দোস্ত , নিচে ব, কে এফ সি র চিকেন আনছি।

– আমি খামু না।

– আরে ব্যাটা খাইতে না পারছ, একটু টেস্টতো করবি

– আইচ্ছা

– জাকির ভাই আপনেও আসেন

– জাকির ভাই আমি আজকে ভাত খাব না।

– খাবেন না কেন, আজকে তো চিকন পাকাইছি, মিয়া না খাইলে কি হয়

– ভাই পেটে জাগা নাই

– কিরে ভাই, আমারে বাদ দিয়াই শূরু করছেন

– আরে বেলাল ভাই , আসেন , কাধে  এতবড় কার্টনে কি আনসেন

– আজকে ক্যারি ফোর দেখলাম চিকেন ডিসকাউন্ট দিছি, ১ পিছ চিকেন ১০টা , আর কার্টন নিলে ৯ টা করে, তাই চিন্তা করলাম , পুরা কার্টনটা নিয়া ফেলি। গুরূ আপনে কি কন।

– বেলাল ভাই , ভালা করছেন, আরেকটা কাজ করেন , নিজের এখন আর মানূষ মনে হয় না। আমারে কোন চিকেন ফার্মকে রাইখা আসেন, এই  চিকেন খাইতে খাইতে মনে হয়তাছে আমিও একটা চিকেন।

লেখাটি শেয়ার করুনঃ
  • Print
  • Facebook
  • Yahoo! Buzz
  • Twitter
  • Google Bookmarks
  • Add to favorites
  • Google Buzz
  • Live
  • Orkut
  • email

One thought on “নিজেকে একটা চিকেন মনে হয়

Comments are closed.